কিয়ামতের ২য় আলামত ঈসা আ. এর পূনরাগমন
কিয়ামত বা বিচার দিবসের দ্বিতীয় বড় আলামত হল সায়্যিদিনা ঈ’সা আ. এর পুনরায় আগমন। এর সূত্রপাত হবে সায়্যিদিনা ঈ’সা আ. দামেস্কে অবতরণ করার মধ্য দিয়ে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই জায়গা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন,
فَيَنْزِلُ عِنْدَ الْمَنَارَةِ الْبَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ.
অর্থ: “...তিনি দামেস্কের পূর্বদিকের সাদা মিনারের পাশে অবতরণ করবেন...।” (সহীহ মুসলিম, খন্ড ৪ পৃষ্ঠা ২২৫৩ হাদীস নং ৭০১৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এই কথা বলছিলেন তখন দামেস্কে কোন মাসজিদ ছিলনা। তখনও পর্যন্ত সেখানে কোন মুসলিমও ছিলনা। এটি ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অংশ। তারা খ্রিস্টান ছিলো। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনি দামেস্কের পূর্বে সাদা মিনারের পাশে অবতরণ করবেন।
উমাইয়া মাসজিদ দামেস্কের বড় মাসজিদগুলোর একটি। আর মুসলিম ইতিহাসে এই মাসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মুসলিম খিলাফাহর রাজধানী দামেস্কে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এর সময়কাল ছিল প্রায় একশ বছর। এটি ছিল উমাইয়া খিলাফতের এর যুগে। আর তখনকার গ্র্যান্ড মাসজিদ ছিল, জামিউল উমাবি বা উমাইয়া মাসজিদ। তখন এর রঙ সাদা ছিল না।
ইবন কাসীর রহ. বলেন, “কয়েক শতাব্দী পর ঐ মাসজিদ এর মিনারগুলো পুনরায় নির্মাণ করা হয়। আর এসময় সেগুলো সাদা রঙ করা হয়। এই পুন:নির্মাণের খরচ বহন করেছিল খ্রিস্টানরা। এখানে ব্যবহার করা হয়েছিল খ্রিস্টানদের টাকা।”
কিন্তু তিনি বলেন নি কেন তা করা হয়েছিল। তখনই এই মিনারের রঙ সাদা করা হয়। আজ অবধি তা সাদাই আছে।
সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি এক সময় সেখানে কোন মসজিদ ছিল না। পরে একটা সময় আসল যখন সেখানে মসজিদ হয় তখন তার রঙ সাদা ছিল না। পরবর্তীতে তার সাদা রঙ করা হয়। যা কিনা আজও আছে। এখন তা সাদা রঙ অথবা মার্বেল পাথরের কারণে সাদা দেখায়। সুবহানাল্লাহ, সেখানেই সায়্যিদিনা ঈ’সা আ. এর আগমন কথা। সেই মিনারের অর্থায়নও করেছিল খ্রিস্টানরাই। এটা নিঃসন্দেহে আশ্চর্যজনক একটি ঘটনা। আমরা এই ঘটনার আলোকে খ্রিস্টানদেরকে দাওয়াহও করতে পারি।
রঙের সাথে সম্পর্কিত আরেকটি ঘটনা আছে, এটি হারাম আন-নববী। মদীনার মসজিদ, হারাম আন নববী; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় এটি নির্মাণ করা হয়েছিল কাঁদামাটি দিয়ে।
উসমান রাযি. এর খিলাফতের সময় এটি পুন:নির্মাণের আগ পর্যন্ত তা এমনি ছিল। মুসলিম ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে এটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এটির রঙ কখনও সাদা ছিল না। এটি সাদা করা হয় সর্বশেষ নির্মাণের সময়, বর্তমান সৌদি শাসনামলে। এই মাসজিদের মিনারগুলোতে মার্বেল বসানোর কারণে তা সাদা দেখায়। মার্বেল নিজে একেবারে সাদা নয়। কিছুটা হাল্কা সাদা। মার্বেল কিছুটা প্রতিফলন ধর্মী। আর তাই মার্বেল মক্কায় অনেকটা ধূসর বর্ণের দেখায়। যা কিনা মদীনায় যথেষ্ট সাদা।
আমি এটা বলছি না যে মসজিদ পুন:নির্মাণের সময় এই হাদীস মাথায় রেখেই কাজ করা হয়েছিল। বরং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এটি এজন্য করেছে যাতে মসজিদকে আরো সুন্দর দেখায়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীস আছে, যেখানে তিনি বলেন যে, দাজ্জাল উহুদ পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। কারণ সে মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। আর সে তার বাহিনীকে বলবে, “তোমরা কি ওই সাদা প্রাসাদকে দেখতে পাচ্ছো? ওটা হলো মুহাম্মাদের প্রাসাদ।”
অতঃপর সে মসজিদে নববীর দিকে ইশারা করে দেখাবে। খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার।
ঈ’সা আ. এর আগমনের বর্ণনাগুলো মুতাওয়াতির। মুতাওয়াতির মানে হল বহুবার বর্ণিত হয়েছে এমন হাদীস এবং তার সত্যতার ব্যাপারে মনে কোন সংশয় সন্দেহের অবকাশ থাকে না। কারণ হাদীসের নামে অনেক জাল বর্ণনা প্রচলিত আছে। অনুরূপভাবে আবার কিছু আছে দুর্বল বর্ণনা। যেগুলোকে যয়ীফ বলা হয়। এর থেকে ওপরের স্তরে আছে হাসান। আর তার ওপরে আছে সহীহ। অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য। সবচেয়ে শক্তিশালী সহীহ বর্ণনা হল মুতাওয়াতির।
মুতাওয়াতির বর্ণনা এমন যা হল নিশ্চিত জ্ঞান। এতোবার এগুলো বর্ণনায় এসেছে যে, দ্বিধা-দ্বন্দের কোন অবকাশ নেই। আমাদের বিশ্বাস তাই এমন যে মারইয়াম পুত্র সায়্যিদিনা ঈ’সা আ. এর আগমন একটি নিশ্চিত ঘটনা। মানে আমরা বলি না যে, ঈ’সা আ. এর আগমনের সম্ভাবনা ষাট বা সত্তর পারসেন্ট। না, এটি এমন একটি বিষয় যা প্রতিটি মুসলিম বিশ্বাস করে। এখানে মতপার্থক্যের কোন জায়গা নেই। কুরআনের আয়াত এবং অনেক হাদীস দ্বারা এই বিষয় পরিস্কার হয়ে গিয়েছে যে ঈ’সা আ. ফিরে আসবেন।
وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِلسَّاعَةِ
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই সে (ঈসা আ.) হবে কিয়ামতের এক সুনিশ্চিত আলামত।” (সূরা যুখরুফ, আয়াত ৬১)
দাজ্জালের মৃত্যু (৯ বার পঠিত )
মহাপ্রলয় (৯ বার পঠিত )
ইয়াজুজ মাজুজ (দাজ্জাল, মহাপ্রলয় ও বিচার দিবস বই থেকে) (৮ বার পঠিত )
কিয়ামতের নবম আলামত (৮ বার পঠিত )
আস সুর (শিংগায় ফুতকার) (৮ বার পঠিত )
রূহানী মেথড অফ হাকীম আল-মীযান (৮ বার পঠিত )