কিয়ামতের ৩য় আলামত ইয়াজুজ মাজুজ
ইয়াজুজ মাজুজ হল দুটি সম্প্রদায়। তারা কি মানুষ? নাকি ভিন্ন এক সৃষ্টি? তারা কি আদম সন্তান? এবং এর উত্তর হচ্ছে, তারা অবশ্যই আদম সন্তান। এর দলীল রয়েছে সহীহ বুখারীতে।
অর্থ: “হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আদম আ. কে বলবেন ‘হে আদম!
আদম আ. বলবেন, লাব্বাইক! আমি উপস্থিত হে আমার রব! সকল প্রশংসা ও সৌভাগ্যের অধিপতি আপনিই।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে উচ্চ আওয়াজে তখন বলা হবে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন যে তুমি তোমার বংশধরদের মধ্য থেকে জাহান্নামের অধিবাসীদের আলাদা করো। (কারণ মানবজাতির একাংশ জাহান্নামে এবং অপরাংশ জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই আল্লাহ পুরো মানবজাতির পিতা আদমকে বলবেন তার বংশধর হতে জাহান্নামের অধিবাসীদের আলাদা করতে। কিন্তু আদম তো জানেন না যে কারা জাহান্নামী আর কারা জান্নাতী। তাই-)
তিনি জিজ্ঞেস করবেন “কারা জাহান্নামের অধিবাসী?” আমার বংশধরদের কী পরিমাণ অংশ জাহান্নামে প্রবেশ করতে যাচ্ছে?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁকে বলবেন, প্রতি হাজারের মধ্যে নয়শত নিরানব্বই জন। প্রতি ১০০০ মানুষের মধ্যে ৯৯৯ জন জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
সেদিন অবস্থা এতো ভয়াবহ হবে যে, গর্ভবতী সন্তান সম্ভবা তার গর্ভের সন্তানকে প্রসব করে ফেলবে, শিশুবাচ্চারা বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং আপনি দেখবেন যে মানুষরা মাতালের মতো ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে আছে -যদিও তারা মাতাল নয়। (এটা হবে আল্লাহর আযাবের ভয়ে) কারন আল্লাহর আযাব খুবই কঠিন!
(এটা সাহাবাদের হৃদয়ে এক প্রচন্ড আঘাত ছিল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাদের চেহারা দেখে তা আঁচ করতে পেরেছিলেন। সাহাবাদের হৃদয় ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল।)
সাহাবায়ে কিরাম যখন হাদীসটি শুনলেন তখন তাদের চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেল। তারা নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বুঝতে পেরেছিলেন।
অতঃপর সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন “আমাদের মধ্যে কার নিশ্চয়তা আছে এই প্রতি হাজারের একজন হবে?” অর্থাৎ সুযোগ এতই ক্ষীণ! অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বললেন, ইয়াজুজ মাজুজের মধ্যে থেকে হবে সেই জাহান্নামী ৯৯৯ জন আর তোমাদের মধ্য হতে হবে (জান্নাতী) একজন।” (সহীহ বুখারী, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য এক হাদীসে বলেন, যদি ইয়াজুজ মাজুজকে কোন দলে সংযুক্ত করা হয় তবে তারা দলটিকে সংখ্যায় অনেক করে তুলবে। অর্থাৎ তারা সংখ্যায় এত বেশী হবে যে, সংখ্যাধিক্যের কারণে সবসময় অনুপাতটা তাদের পক্ষে থাকবে। তারা সংখ্যায় এত বেশি হবে যে একটি বর্ননা আছে যেখানে বলা আছে, যখন তাদের একজন মারা যাবে তারা তাদের এক হাজার বংশধর রেখে যাবে। তবে বর্ণনাটি দুর্বল হতে পারে ।
যাই হোক তারা সংখ্যায় অনেক বেশী হবে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ.
অর্থ: “এমনকি যখন (কিয়ামতের নিদর্শন হিসাবে) ইয়াজুজ ও মাজুজকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং ওরা প্রতিটি উচ্চভূমি থেকে (পতঙ্গের ন্যায়) নিচের দিকে বেরিয়ে আসতে থাকবে।” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯৬)
অর্থাৎ তারা সংখ্যায় অধিক হবে। তাই প্রথমে উল্লেখিত হাদীসটি থেকে বুঝা যায় তারা আদমের বংশধর হবে কারণ আল্লাহ আদমকে বলবেন তার বংশধর হতে জাহান্নামের অধিবাসীদের আলাদা করতে।
আরেকটি সহীহ হাদীস যেখানে ইয়াজুজ মাজুজের কথা বলা হয়েছে। হাদীসটি সহীহ মুসলিমে রয়েছে,
অর্থ: “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ঈসা আ. এর কাছে ওহী পাঠাবেন “আমার সৃষ্টি হতে এমন এক জনসমষ্টি বের হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ করতে সক্ষম নয়। তাই তুমি আমার বান্দাদের নিয়ে নিরাপদে “তুরে” চলে যাও।” তুর ফিলিস্তিনে অবস্থিত। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা ইয়াজুজ মাজুজের ব্যাপারে ঈসাকে সতর্ক করবেন। ঈসা আ. সকল বিশ্বাসীদের নিয়ে জেরুজালেমে (ফিলিস্তিন) লুকিয়ে থাকবেন।
অতঃপর ইয়াজুজ-মাজুজ দলে দলে প্রতিটি উঁচুস্থান হতে নেমে আসবে। তাদের প্রথমজন টাইবেরিয়াস হ্রদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পানি পান করবে। টাইবেরিয়াস হ্রদটি ফিলিস্তিনে অবস্থিত। আর শেষজন যখন এর পাশ দিয়ে যাবে তখন সে বলবে, মনে হচ্ছে এখানে একদা পানি ছিল। তারা সংখ্যায় এত বেশী হবে যে তারা সম্পূর্ণ পানিই পান করে ফেলবে ।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঈসা (আঃ) তার সাথীগণ ইয়াজুজ মাজুজ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন এবং তাদের অবস্থা এতই শোচনীয় হবে যে তাঁদের (ঈসা ও তার সাথীদের) কাছে একটি ষাড়ের মাথা একশত দিনারের চেয়ে প্রিয় হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় একশত দিনার মূল্য অনেক ছিল। খাদ্য সংকটের কারণে একটি ষাড়ের মাথা সেই একশত দিনারের চেয়ে মূল্যবান হয়ে পড়বে। অথচ আমরা ষাড়ের মাথা অনেক সময় না খেয়েই ফেলে দেই। অতঃপর ঈসা আ. ও তাঁর সাথীগণ আল্লাহর নিকট দুয়া করবেন তাই আল্লাহ তাদের কাছে কীটপতঙ্গ পাঠাবেন সেগুলো ইয়াজুজ-মাজুজের ঘাড়ে আক্রমণ করবে এবং সকলে তারা একযোগে মৃত্যুবরণ করবে। দুটি সম্প্রদায়ই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে ।
কিন্তু সমস্যা রয়েই যাবে। ঈসা (আঃ) ও তাঁর সাথীগণ যখন সমতলে নেমে আসবেন তখন তাঁরা পৃথিবীর সর্বত্র ইয়াজুজ-মাজুজের মৃতদেহের পচনের গন্ধ পাবেন। তাদের দেহাবশেষ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে সম্পুর্ণ পৃথিবী দূষিত হয়ে পড়বে। অর্থাৎ ইয়াজুজ-মাজুজ জীবিত, মৃত উভয় অবস্থায়ই মুসলিমদের ক্ষতি করবে। অতঃপর ঈসা (আ.) ও তাঁর সাথীগণ আল্লাহর নিকট পুনরায় দুয়া করবেন এবং আল্লাহ এক ঝাঁক পাখি প্রেরণ করবেন। যাদের গলা হবে উটের গলার মত বিশাল। তারা মৃতদেহগুলো বয়ে নিয়ে যাবে এবং আল্লাহর আদেশে অন্যত্র নিয়ে ফেলবে। অতঃপর আল্লাহ বৃষ্টিবর্ষণ করবেন, এতে পৃথিবী আয়নার মত পরিস্কার হয়ে যাবে।” (সহীহ মুসলিম, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৫৩-২২৫৪)
চলবে...
বই পরিচিতি:
বইয়ের নাম : দাজ্জাল মহাপ্রলয় ও বিচার দিবস
সংকলন ও সম্পাদনা: মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান
প্রকাশনায় : খান প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ : মার্চ, ২০১৮
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩০০+
মূদ্রিত মূল্য : ৩৬০ টাকা।
প্রি অর্ডার স্পেশাল মূল্য ১৫৫ টাকা মাত্র।
প্রি অর্ডার লিংক http://bit.ly/2FxKCVQ
দাজ্জালের মৃত্যু (৯ বার পঠিত )
মহাপ্রলয় (৯ বার পঠিত )
ইয়াজুজ মাজুজ (দাজ্জাল, মহাপ্রলয় ও বিচার দিবস বই থেকে) (৮ বার পঠিত )
কিয়ামতের নবম আলামত (৮ বার পঠিত )
আস সুর (শিংগায় ফুতকার) (৮ বার পঠিত )
রূহানী মেথড অফ হাকীম আল-মীযান (৮ বার পঠিত )